ছোটো গল্পের পাতা





ভোরের স্বপ্ন  

অলক দাঁ,  দুবরাজপুর



ভীষণ খারাপ একটা স্বপ্ন দেখে হাউমাউ করে কান্না জুড়েছে রাঙি বাউড়ি। কাকভোরে মরা কান্না শুনে প্রতিবেশী খাঁদি উঁকি দিলো। তত্ত্ব করে জানলো রাঙি সপন দেখেছে, তা বেটি রাধা গলায় ফাঁস দিয়ে  মটগাছা থেকে ঝুলছে।
উসব সত্যি লয় স্বপন, তুর বিটি  বাডা সিয়ানা ব্যাটে। কুছুই হবেক না উঅর। তু সপন দেখেছিস। সান্ত্বনা দেয় খাঁদি। রাঙি সে কথা মানতেই চায় না। চীত্কার করে কাঁদে --ভুরের সপন যি সত্যি হয়টে। আমি আখুন কি করব্য টে?
খাঁদি এবার ঝাঁঝকে ওঠে।  তখন তুখে সুবাই কত করে বললেক, অচিনা নুকের সতে রাধার বিয়েটো দিস না।  শুনলি মানা? বাবুদের পারা সোন্দর জামাই পেয়েঁ বত্তিয়েঁ গেলি। মর আখুন কেঁদে কেঁদে।  খাঁদি গোবরের বাল্তি হাতে উঠোন নিকোতে চলে গেল। দু পা মেলে ছেঁড়া বিছানায় বসে কেঁপে উঠছে  রাঙি। একি ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন।  ধরমপুরের হারু বাউড়ির মেজছেলের সাথে রাধার বিয়ের কথা  চলছিল। হঠাৎ  বাবুদের মত ফিটফাট একটা ছেলেকে এনে রাধা বললো, একেই তার পছন্দ। পাত্র অধর দাস কোলিয়ারীর মোটা মাইনের চাকুরে। সুন্দর  কথাবার্তায় বিধবা রাঙি বাউড়িকে বাগ মানাতে দুদিন ও লাগেনি অধরের। ঠাকুর থানে সিঁদুর পরে মালা গলে মাকে প্রণাম করল দুজনে। মেয়েজামাইকে এবেশে দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করলো রাঙি। এক পয়সা খরচ হল না। উল্টে জামাই শাশুড়ীর হাতে মোটা টাকা গুঁজে দিলো। কুড়ে ঘরেই ফুলসজ্জা হয়ে গেল।  পরদিন  খেয়ে দেয়ে মেয়ে জামাই বিদায় নিলো। সে আজ ছমাস আগের কথা।
খাঁদির বড়ছেলে রামু ট্রাকের খালাসি।  তার ফোন থেকে মাস দুয়েক বেশ যোগাযোগ হচ্ছিল।  ইদানিং ফোন বিচ্ছিন্ন।  অজানা কি এক আশঙ্কা রাঙির চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ভোরের স্বপ্নে অস্থির রাঙি রামুর ঘরে ছুটলো। রামু ছুটি পেয়ে আজ বাড়িতেই আছে।  ভেঙে পড়া রাঙিকে সান্ত্বনা দিয়ে সে ছুটলো রাধার খোঁজে। কোলিয়ারীর যে ঠিকানা  অধর দিয়েছে, দেখা গেল সেটা ভুয়ো। তবুও চেহারার বর্ণনা দিয়ে বহু জায়গায় খোঁজ করলো রামু। কোন হদিস মিললো না। বরং শুনতে পেলো এ অঞ্চলেরও দু একটা মেয়ের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।  পাচার চক্রের সন্ধানে পুলিশ ও সক্রিয়।  ঘর্মাক্ত শরীরে বাড়ি ফিরে রামু কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না রাঙি পিসিকে কি ভাবে সত্যিটা বলবে  যে রাধা পাচার চক্রের  শিকার ।।


_________________________________________



বাস্তব অভিনেতা

মোহাঃ বেলাল উদ্দিন মন্ডল



বড়বাবু --আরে তুই আজও এখানে দাড়িয়ে।গতকাল তোকে মেরে তাড়িয়ে দিলাম।
শ্রমিক--হাঁ সাহেব!
বড়বাবু --তবে এখানে দাঁড়িয়ে লকডাউন মানছিস না কেন?
শ্রমিক--সাহেব আমার জমি জায়গা নেই,আমি দিন মজুর ।বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা মা ও ছেলে মেয়ে রয়েছে।
বড়বাবু--তাতে কি হয়েছে।
শ্রমিক --আমি এখানে রোজ দাঁড়িয়ে থাকি ,কারো কাজ থাকলে আমাকে বলে আর সেটার পরিবর্তে টাকা পায় তাতে আমার সংসার চলে তাই দাঁড়িয়ে থাকি।করোনার ভয় আমার ও আছে।তবে আমার জন্য কয়েকজন অপেক্ষা করে থাকে।
পুলিশ --সাহেব পাশে শুনুন ,লোকটি বড়ো অসহায় তবুও কেমন অভিনয় করে হাসিমুখে কথা বলছে ।দুঃখ থেকেও বোঝা যাচ্ছে না।ওকে আজ মেরেন না।
বড়বাবু --কাওকে মারতে আমারও ইচ্ছা করে নারে তবে আইন মেনে অভিনয় করে কাজ করতে হয়।দুঃখ আমাকেও লাগে।যদি ভয় না দেখায় তাহলে রোগ ছড়িয়ে সকলে মারা যাবে।
পুলিশ--হাঁ বাবু মনে দুঃখ নিয়ে হাসিমুখে বাস্তবে অভিনয় করে চলতে হয়। আমাদের মত কত বাস্তব অভিনেতা অভিনয় করে ঘুরে বেড়াচ্ছে একমাত্র মহান ঈশ্বর-ই জানে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3মন্তব্যসমূহ

  1. ভোরের স্বপ্ন গল্প টি দারুন লাগলো । লেখক কে শুভ কামনা জানাই । আমি আমার বন্ধু দের সাথেও এটা share করলাম । ♥️

    উত্তরমুছুন
  2. খুব খুব ভালো লাগলো ll এত সুন্দর একটি কাগজ

    উত্তরমুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Today | 15, March 2025